মেছতার উপসর্গ,কারন,প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায় সমূহ

ত্বকের যে সমস্ত সমস্যা বেশী দেখা যায় তার মাধ্যে অন্যতম হলো মেছতা। এর জন্য মেয়েরা খুব দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকে। এটি ছেলে মেয়ে উভয়েরই হতে পারে। তবে তুলনামূলক ভাবে মেয়েদের বেশী হয়। সাধারণত ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মেয়েদের হয়ে থাকে।

মেছতা কি?
আমাদের ত্বাকের নিচে মেলানিন নামের এক ধরণের রঞ্জক পদার্থ থাকে। কোন কারণে ত্বকের বিশেষ জায়গায় এটির কার্যক্ষমতা বেশী হলে ত্বকের সেই অংশটি পাশ্ববর্তী অংশের চেয়ে বেশী গাঢ় হয়ে যায়। ফলে ওই অংশটি কালো বা বাদামী থেকে হালকা বাদামী দেখায়। একে মেছতা বলে এবং এটি কোন এলার্জী না। ক্যান্সার বা খারাপ কিছুই করে না। শুধুমাত্র এইটার একটাই ক্ষতি আর তা হলো সৌন্দর্যহানী।

মেছতার উপসর্গ কি?
মেছতা শরীরের যে কোন জায়গায় হতে পারে তবে সাধারণত যে সকল জায়গায় সূর্যের আলো বেশী পড়ে সেই জায়গায় বেশী হয়। মেছতার উপসর্গ একটাই আর তা হলো কালো বা বাদামী রঙের ছোপ। বিশেষ করে গালে, নাকের উপরে, থুতনিতে, উপরের ঠোঁটের উপরের অংশে, গলায়, ঘাড়ে এমনকি হাতেও হতে পারে।

মেছতার কারণ কি?

১. প্রোটেকশন ছাড়া অতিরিক্ত সূর্যের আলোতে গেলে এটি হয়। সূর্যের আলোই প্রধান কারণ হিসাবে ধরা হয়।
২. হরমোনের তারতম্য ঘটলে। যেমন:- গর্ভাবস্থায় এটি হয়ে থাকে।
৩. হরমোন ঔষধ ব্যবহারে বা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট নিলে।
৪. জন্মনিয়ন্ত্রন পিল খেলে।
৫. থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য ঘটলে।
৬. বংশগত কারনে হতে পারে।
৭. ত্বক নিয়মিত ভাল ভাবে পরিষ্কার না করলে।

মেছতার প্রতিকার কি?

মেছতার পুরোপুরি প্রতিকার করা সম্ভব হয়রা। তবে অবস্থার উন্নতি করা যায়। তাই মেছতা হলে প্রথমেই একজন ভালো ডার্মাটোলজিস্টকে দেখাতে হবে। সাধারণত চিকিৎসকেরা উডস ল্যাম্পের সাহায্যে মেছতা নির্ণয় করে থাকেন। এরপর মেছতার জন্য তারা বিভিন্ন ঔষুধের ক্রীম বা জেল দিয়ে থাকেন।
যেমন:-
১. Hydroquinone:- এটি টাইরোসিনেজ নামক এনজাইমকে বাঁধা দেয়, যা মেলানিন তৈরী করে। ফলে ত্বকের যে জায়গায় মেছতা হয়েছে সেই জায়গাটি সাদা করতে সাহায্য করে। তাই এটি ডাক্তারদের প্রথম পছন্দ।
২. Treinoin Acid & Corticosteroids:- এটি ডাক্তারদের ২য় পছন্দের ঔষধ। মাঝে মাঝে একটি মেডিসিন ৩টি ড্রাগস নিয়ে তৈরী হয়। একে ট্রিপল ক্রীম বলে। এই ট্রিপল ক্রীমে Hydroquinone, Treinoin Acid & Corticosteroid থাকে।
 ৩. Azelaic Acid Or Retinoid:- যদিও এটি ব্রণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। তারপরেও এটি মাঝে মাঝে মেছতার জন্য ডাক্তাররা দিয়ে থাকেন। মনে রাখবেন এগুলো কিন্তু ক্রীম বা জেল হিসেবে মুখে মাখতে হয়। খাওয়ার জন্য নয়। যদি এই ক্রীম গুলো দেয়ার পর নিম্নোক্ত উপসর্গগুলো দেখা দেয় তবে ডাক্তারকে দেখাবেন।
* ত্বকে ইরিটেশন হলে বা চুলকালে।
* ত্বক কালো হয়ে গেলে।
* অন্যান্য সমস্যা হলে।

এছাড়া যে সকল কারণে মেছতা হয়েছে তা পরিহার করা উচিৎ। সুগন্ধী কসমেটিকস এবং পিল ব্যবহার করা ছাড়ে দিতে হবে। সূর্যের আলো থেকে ত্বককে রক্ষা করতে হবে। গর্ভাবস্থায় যে মেছতা হয় তা অনেক সময় বাচ্চা হয়ে যাওয়ার পর আপনা আপনি সেরে যায়। এছাড়াও মেছতার জন্য কিছু টাইপের লেজার ও ক্রায়োসার্জারি ট্রিটমেন্টও আছে।

মেছতার জন্য কোন ফেসিয়াল ভাল?
মেছতার জন্য পিল ফেসিয়াল এবং অ্যালোভেরা ফেসিয়াল ভালো।

মেছতা হলে ঘরে বসে কি কি ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নিতে পারি?
১. ডিম এবং লেবুর রস মিুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে ২ বার।
২. অ্যালোভেরা,শশা এবং মধু একত্রে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
৩. লেবুর রস এবং সমপরিমান পানি মিশিয়ে অক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
৪. অ্যালোভেরা জেল রাতে ঘুমানোর আগে আক্রান্ত স্থানে মেখে সারারাত রেখে পরদিন সকালে হালকা গরম পানি দিয়ে ফেলুন। এর সাথে ভিটামিন “ই” ও মেশাতে পারেন।এছাড়া অ্যালোভেরা জেলের তৈরী শরবত খেলেও বেশ উপকার পাবেন।
৫. আপেল সিডর ভিনেগার ও সমপরিমান পানি মিশিযে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
৬. পেঁয়াজের রস এবং আপেল সিডর ভিনেগার মিশিয়ে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
৭. ৫ চামচ হলুদের গুড়োর সাথে ১০ চামচ হালকা গরম দুধ মিশিয়ে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

প্রতিরোধের উপায় কি?
বলা হয়ে থাকে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। তাই মেছতা হওয়ার আগেই প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে মেছতা না হয়।
১. সানস্ক্রীন ছাড়া একদমই রোদে বের হবেন না। সানস্ক্রীন যাতে ব্রড প্রটেকশনযুক্ত হয় যা এর প্রতি ব্লক তৈরী করে। বাইরে যাওয়ার কমপক্ষে ২০ মিনিট আগে লাগাতে হবে এবং পরে প্রতি ২ ঘন্টা পরপর আবার লাগাতে হবে। মেছতা হওয়ার পরও এই নিয়মে চলতে হবে।
২. ছাতা ও স্কার্ফ বা উড়না বা হ্যাট ব্যবহার করুন। কেননা কোন সানস্ক্রীনই ১০০ ভাগ প্রোটেকশন দিতে পারে না। তাই সানস্ক্রীন লাগানোর পরও এগুলো ব্যবহার করুন।
৩. সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত কোন জরুরী কাজ না থাকলে বাইরে বের হবার চেষ্টা করবেন না। বের হলেও প্রপার প্রোটেকশন নিয়ে বের হবেন।
৪. ত্বক নিয়মিত পরিষ্কার করবেন এবং যত্ন নিবেন।
৫. জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল না খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
৬. বেশী চিনি কাবেন না। আবার বেশী ঝালও খাবেন না।
৭. বেশী করে পানি এবং ফল খাবেন।

মেছতা ঢাকার উপায় কি?
হোয়াইট বা ইয়োলো আন্ডার টোনের মেকআপ ব্যবহার করে মেছতা ঢাকা যায়।


CONTACT
+6 1137468980 (Malaysia) 
01622582330 (Bangladesh)

No comments

Powered by Blogger.